রাতে ঘুমানোর আগে শসা খেলে কি হয়
রাতে ঘুমানোর আগে শসা খেলে কি হয় এটা জানলে আপনি হয়তো অবাক হবেন। কারণ ঘুমানোর আগে শসা খাওয়ার অনেক ভালো গুণ রয়েছে যা আপনার শরীর সুস্থ রাখতে কাজে আসবে। রাতে শসা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও রাতে শসা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদ্ধ জীবের মতো সমস্যাগুলো দূর হবে। আজকের আর্টিকেলে রাতে শসা খেলে কি কি হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পেজ সূচিপত্রঃ রাতে ঘুমানোর আগে শসা খেলে কি হয় সেই সম্পর্কিত
রাতে ঘুমানোর আগে শসা খেলে কি হয়
রাতে ঘুমানোর আগে শসা খেলে কি হয় তা যদি আপনি জানেন তাহলে অবাক হয়ে যাবেন। কারণ শসাতে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থ রাতে ঘুমানোর সময় আমাদের শরীরে অনেক বিপাক ক্রিয়া করে। যা আমাদের খাদ্য হজম করতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য জড়িত সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
- শসাতে প্রায় ৯৫% পানি থাকে, তাই রাতে শসা খেলে সারারাত শরীর হাইড্রেটেড থাকবে।
- শসাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা আমাদের হজম শক্তি আরও বৃদ্ধি করে দেয়।
- শসা একটি শীতল ফল, তাই রাতে শসা খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- শসাতে রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য আরো ভিটামিন। যা আমাদের শরীরে পুষ্টি যোগায়।
- রাতে শসা খেয়ে ঘুমালে অনেক ভালোভাবে ঘুম হয়। কারণ এতে থাকা জল ও ফাইবার আমাদের ঘুমকে আরো বৃদ্ধি করে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি শসা খাওয়া আপনার জন্য অনেক উপকারী। এটি রাতের খাবারের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য হতে পারে। তবে অবশ্যই আপনাকে এটি পরিমাণ মতো খেতে হবে যাতে শরীরের কোন প্রকার ক্ষতি না হয়। কারণ আমি জানি সকল খাদ্যই আমাদের পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত কোনো কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
শসা খেলে কি গ্যাস হয়
দৈনিক শসা খেলে কি গ্যাস হয় এই প্রশ্নটা হয়তো মাঝেমধ্যেই আপনার মনে হয়। আসলে অতিরিক্ত শসা খেলে আপনার গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা হতে পারে। কারণ শসাতে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থ পাকস্থলীতে গিয়ে বিপাক ক্রিয়া ব্যাঘাত করে। ফলে খাদ্য হজম করতে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আপনি যদি পরিমাণের বাইরে শসা খান তাহলে অবশ্যই আপনার গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা হবে।
শসাতে রয়েছে কিউকারবিটাসিন নামক এক ধরনের পদার্থ যা মানুষের পেটে গ্যাস এবং খাদ্য হজমে বাধা সৃষ্টি করে। যাদের হজম শক্তি দুর্বল তাদের জন্য কাঁচা শসা খাওয়া গ্যাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া অনেকে লবণ দিয়ে অথবা বিভিন্ন ঝাল মসলা দিয়ে শসা খেয়ে থাকেন। এটাও গ্যাসের জন্য একটা বড় ধরনের কারণ হতে পারে। তাই শসার খোসা ছাড়িয়ে খেতে হবে, পরিমান মত শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খেতে হবে এবং শসাকে ধীরে ধীরে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে।
ওজন কমাতে শসা খাওয়ার গুরুত্ব
ওজন কমাতে শসা খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ শসাতে রয়েছে জিরো ক্যালরি যা ওজন কমাতে সহায়ক। আপনি যদি ওজন নিয়ে চিন্তিত তাহলে শসা একটি আদর্শ খাবার হতে পারে। ডায়েট যারা করে তাদের খাদ্য তালিকায় শশা অবশ্যই থাকবে। প্রতি ১০০ গ্রাম শসায় প্রায় ১৫ ক্যালোরি থাকে। এটি একটি লো ক্যালোরি খাদ্য। তাই ডায়েট করা ব্যক্তির জন্য এটা একটি আদর্শ স্ন্যাক হতে পারে। শসায় বিদ্যমান ফাইবার খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে এবং দেহে মেটাবলিজমের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
আরো পড়ুনঃ ফাইভার গিগ প্রমোট করার ১৫টি টিপস
আপনি ইচ্ছা করলে সকালের নাস্তায় শসা যোগ করতে পারেন। দুপুরে সালাদ হিসেবে শসা খাওয়া যেতে পারে এবং রাতে ঘুমানোর আগে শসা খেলে কি হয় তা হয়তো এতক্ষণে আপনি বুঝতে পেরেছেন। এছাড়াও বিকেলে স্নাক্স হিসেবে শশা খেতে পারেন। সব মিলিয়ে শসার গুনাগুন অনেক বেশি। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শশা থাকলে আপনি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।
শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসা খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক ও চুলের জন্য খুবই ভালো, এতে রয়েছে সিলিকা, ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জলতা এবং চুল মজবুত করতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে শসা কার্য কর ভূমিকা রাখে। কারণ এতে রয়েছে পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
শসা হলো একটি শীতল ফল, তাই গ্রীষ্মকালের তীব্র গরমে শসা খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শসা অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য। অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীরা জানেনা যে রাতে ঘুমানোর আগে শসা খেলে কি হয়, রাতে শসা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে। কারণ এতে রয়েছে লাইকোপিন এবং ইমিউন সিস্টেম যা ডায়াবেটিক্স ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
শসা খাওয়ার অপকারিতা
শসা খাওয়ার অপকারিতা অনেক বেশি না। তবে পরিমাণের চেয়ে অধিক খেলে এর কিছু কিছু অপকারিতা রয়েছে। অন্যান্য খাবার কম খেয়ে সারাদিন যদি অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খান তাহলে খুদা লাগবে না এর ফলে পেটে বদহজম সৃষ্টি হবে। যা পরবর্তীতে গ্যাস্ট্রিক এবং পেটের আলসার জনিত সমস্যার জন্য দায়ী হবে। এছাড়াও পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ দেখা দিবে।
যদি আপনি ওজন কমানোর জন্য সারা মাস শসা খেয়ে যান তাহলে আপনার নানা ধরনের সমস্যা হবে। এর প্রধান সমস্যা হল শরীরে অপুষ্টি। অন্য খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্য কমানোর জন্য শুধুমাত্র শসা খেলে শরীরে অন্যান্য ভিটামিনের অভাব দেখা দিবে। ফলে আপনি অপুষ্টিতে ভুগবেন এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। ফলে বিভিন্ন রোগে আপনি আক্রান্ত হবেন। তাই অবশ্যই পরিমাণমতো শসা খাওয়া উচিত।
সকালে খালি পেটে শসা খেলে কি হয়
সকালে খালি পেটে শসা খেলে কি হয় এটা একটা কমন প্রশ্ন। আপনারা অনেকেই আছেন যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট অনুসরণ করেন। সেই ডায়েট অনুসরণ করতে গিয়ে আপনারা সকালে শসা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন। খুবই ভালো গুণ, তবে একদম খালি পেটে শসা খেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এরমধ্যে প্রধান সমস্যা হল বদহজম জনিত সমস্যা।
পেট খালি থাকায় অবস্থায় যখন শসা খাবেন তখন তা বিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাবে। ফলে পাকস্থলীতে গ্যাস এর সৃষ্টি হবে। এটি যদি দীর্ঘমেয়াদী চলতে থাকে তাহলে পেটের আলসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই অবশ্যই সকালে খালি পেটে শসা খাওয়ার আগে কিছু খেয়ে দিবেন। হালকা কিছু নাস্তা খাবার পরে শসা খেলে কোন ধরনের সমস্যা হবে না।
গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়ার উপকারিতা
একটা গর্ভকালীন মায়ের জন্য গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া মায়ের ও শিশুর উভয়ের জন্য খুবই উপকার। এটি হালকা এবং সহজে হজম হয় যা গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি আদর্শ খাবার। নিম্নে শসা খাওয়ার কিছু উপকারিতা দেওয়া হলোঃ
- গর্ভাবস্থায় শশা খেলে শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়। কারণ শসাতে ডিটক্স থাকে যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।
- শসা একটি কম ক্যালরিযুক্ত খাবার। তাই এটি খেলে গর্ভবতী নারীর ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরে ফোলা ভাব কমে যায়।
- গর্ভাবস্থায় নারীর রক্তচাপ অনেক অনেক বেশি থাকে। শসা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে কারণ এতে রয়েছে পটাশিয়াম যার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- শসায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা গর্ভবতী মা ও শিশু উভয়েরই রোগ প্রতিরোধ করে।
সর্বশেষে এই বলব যে গর্ভাবস্থায় শশা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। বিশেষ করে যদি হজম জনিত সমস্যা বা এলার্জি থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপরে শসা খাবেন। তাছাড়া শসা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং অবশ্যই পরিমান মত শসা খাবেন।
অতিরিক্ত শসা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
আমরা আমাদের অজান্তেই যে কোন খাবার পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলি। ঠিক তেমনি একটি খাদ্য, অনেকেই অতিরিক্ত পরিমাণে শশা খেয়ে ফেলে। যা তাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। নিম্নে অতিরিক্ত শসা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক গুলো তুলে ধরা হলোঃ
- শসায় থাকা ফাইবার বদহজম সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে পেট ফাঁপা গ্যাস ও ডায়রিয়ার মত ভাবো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- অতিরিক্ত শসা খেলে পেটে অম্লতা বৃদ্ধি পেতে পারে। যা বুক জ্বালা ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত শসা খাওয়ার ফলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ শসাতে প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি থাকে।
- অতিরিক্ত শসা খেলে ঘন ঘন মূত্রত্যাগের প্রয়োজন হতে পারে। যা কিডনিতে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- শসা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়ক, তবে অতিরিক্ত শসা খাওয়ার ফলে রক্ত চলাচল ধীর হতে পারে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
শসা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
শসা খাওয়ার সঠিক নিয়ম গুলো প্রতিটা ব্যক্তির জেনে রাখা উচিত। কারণ শসা একটি উপাদেয় খাদ্য তবে অতিরিক্ত খেলে এর কিছু কিছু ক্ষতি আছে। তাই এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানা আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শসা খাওয়ার খুব একটা বেশি নিয়ম নেই। দৈনিক আপনি পরিমিত শসা খেতে পারেন। তবে খালি পেটে যেন না খান সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সব সময় খাবার পরে শসা খাবেন, সকালে কখনো খালি পেটে শসা খাবেন না। দুপুরে খাবারের সাথে সালাদ হিসেবে শসা খাওয়া উত্তম। রাতে হালকা কিছু খাবারের পরে 100 গ্রাম শসা খেয়ে ঘুমালে আপনার বিপাক ক্রিয়া ভালো হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। কারণ আপনি ইতিমধ্যেই রাতে ঘুমানোর আগে শসা খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে জেনেছেন। তাই দৈনিক নিয়ম মেনে শসা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বাংলাদেশে শসার বিভিন্ন জাত
বাংলাদেশে শসার বিভিন্ন জাত রয়েছে যা উচ্চ ফলনশীল এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু। বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ তাই এদেশে যেকোনো সবজি অনেক ভালো হবে হয়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিছু শসার জাত হলো, বারি শসা-১ ও বারি শসা-২, দেশি জাত শসা, হাইব্রিড জাত শসা, গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন জাত শসা ইত্যাদি আরো শশা রয়েছে।
এই জাতের শশা গুলো প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয় এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু। তাই কৃষকরা এই জাতগুলোর চাষ করে অনেকটা লাভবান হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১৬ টন শসা উৎপন্ন হয়। যা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা সচ্ছল করে এবং দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে। বাংলাদেশ শসা উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে।
আমাদের শেষ কথা
আশা করি এতক্ষণ সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ার পরে রাতে ঘুমানোর আগে শসা খেলে কি হয় এটা বুঝতে পেরেছেন। এর সাথে শসা সম্পর্কিত সকল কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনি উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করে শসা খেলে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়তই এই ধরনের তথ্যবহুল আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আমাদের উদ্দেশ্য আমাদের পাঠকদেরকে সঠিক তথ্য দিতে পারি। তাই এতক্ষণ আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 37164
অর্গানিক সদাই২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url